শিশুর ডেঙ্গু জ্বর: লক্ষণ বুঝে চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাল সংক্রমণ, যা ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। সাধারণত এডিস মশা (Aedes mosquito) দ্বারা এটি ছড়ায়। শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে, এবং তাদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানলে, শীঘ্রই সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।
ডেঙ্গুর লক্ষণ
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ শিশুদের মধ্যে অন্যদের তুলনায় একটু ভিন্ন হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে, যেগুলি খেয়াল করলে আপনি দ্রুত সঠিক চিকিৎসা নিতে পারবেন:
তীব্র জ্বর: ৩৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তীব্র জ্বর আসে। এই জ্বর খুব দ্রুত উঠতে পারে এবং ২-৭ দিন স্থায়ী হতে পারে।
শরীরের ব্যথা ও পেশিতে যন্ত্রণা: শিশু প্রায়ই কোমর, পিঠ, হাড় ও মাথার যন্ত্রণা অনুভব করতে পারে।
বমি ও বমি ভাব: অনেক সময় শিশুরা বমি করতে পারে বা বমি বমি ভাব অনুভব করে।
বডি র্যাশ: শরীরে লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে প্রথম ৩-৪ দিনের মধ্যে।
তীব্র দুর্বলতা ও ক্লান্তি: শিশু ক্লান্তি অনুভব করতে পারে, হাঁটতে বা খেলতে অসুবিধা হতে পারে।
অরুচি: খাওয়ার ইচ্ছা না হওয়া বা খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া।
চোখের পিছনে ব্যথা: অনেক সময় শিশুদের চোখের পিছনে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
গুরুতর লক্ষণসমূহ (ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম)
যদি ডেঙ্গু জ্বর গুরুতর হয়ে যায়, তাহলে কিছু মারাত্মক লক্ষণ দেখা দিতে পারে:
হেমোরেজিক লক্ষণ: গা dark রক্তপাত, নাক দিয়ে রক্ত ঝরা, মল-মুত্রের সাথে রক্ত দেখা দেয়।
তীব্র হ্রাসকৃত রক্তচাপ (শক): শরীরের পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহ না হওয়া। এতে শিশুর হাতে, পায়ে ঠান্ডা ভাব এবং দ্রুত হৃৎস্পন্দন দেখা যায়।
অজ্ঞান বা মস্তিষ্কের অস্বাভাবিকতা: ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের কারণে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে যায়, যা অজ্ঞান বা শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা সাধারণত হাসপাতালে থাকতে পারে, তবে প্রাথমিক স্তরে কিছু পরামর্শ অনুসরণ করলে দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব।
পানি ও তরলজাতীয় খাবার: ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশন (শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যাওয়া) একটি বড় সমস্যা। তাই শিশুদের প্রচুর পরিমাণে পানি, লবণজাতীয় তরল খাবার (যেমন স্যালাইন) বা ফলের রস দেওয়া উচিত।
বেদনা ও জ্বর কমানো: প্যারাসিটামল (যতটুকু চিকিৎসকের পরামর্শ থাকে) শিশুদের জ্বর কমানোর জন্য দেওয়া যেতে পারে। তবে অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এটি রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
পর্যবেক্ষণ: শিশুর অবস্থা দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে। তাই ডেঙ্গু রোগীকে কিছুদিন হাসপাতালে পর্যবেক্ষণের জন্য রাখতে হতে পারে, বিশেষ করে যদি তার রক্তচাপ কমে যায় বা রক্তপাত শুরু হয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ: যেহেতু ডেঙ্গু ভাইরাসের কোন নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই, তাই সঠিক চিকিৎসা এবং লক্ষণ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিরোধ
ডেঙ্গু জ্বরের সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ হলো মশার কামড় থেকে নিজেকে এবং শিশুকে রক্ষা করা:
মশারি ব্যবহার: শিশুদের ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করান।
মশা প্রতিরোধক (repellent): মশা তাড়ানোর জন্য স্কিনের জন্য উপযুক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করুন।
স্টোরেজ স্থানে পানি জমতে দেওয়া যাবে না: ঘর বা আশপাশের পরিবেশে পানি জমে না থাকা নিশ্চিত করুন, কারণ মশা সেখানে ডিম পাড়ে।
স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শ নিন: যদি শিশুর ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।
উপসংহার
শিশুদের ডেঙ্গু জ্বর অত্যন্ত মারাত্মক হতে পারে, তবে যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়া হয়, তাহলে এর থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব। অভিভাবকদের সচেতনতা এবং সতর্কতা ডেঙ্গুর প্রতিকার ও প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
0 Comments